পঞ্চাশ বছর ধরে মাছ বিক্রি, অক্ষমতা জয় করে পুরো সংসারের ভরসা রমনী বালা দাস

আরিফুর রহমান, সুবর্ণচর (নোয়াখালী) প্রতিনিধি:
প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২৫, ০১:২৬

নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চরবাটা খাসেরহাট মাছ বাজারে প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে থাকেন এক সাহসী নারী রমনী বালা দাস। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া শরীর, শারীরিক অক্ষমতা আর দারিদ্র্য কোনোটিই থামাতে পারেনি তাকে।
প্রায় ৫০ বছর ধরে তিনি এ বাজারে মাছ বিক্রি করছেন। প্রথমে স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন। কয়েক বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর একাই টিকে আছেন এ পেশায়। এখন সংসারের হাল ধরেছেন তিনিই।
রমনী বালা দাসের একমাত্র ছেলে প্রতিবন্ধী। তবুও ছেলের বিয়ে দিয়েছেন তিনি। বর্তমানে ছেলের ঘরে রয়েছে পাঁচ সন্তান। ফলে পুরো সাত সদস্যের সংসারের ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছেন এই মা। বয়স ও অসুস্থ শরীর নিয়েও প্রতিদিন বাজারে বসেন, মাছ বিক্রি করে উপার্জিত টাকায় চালান পরিবারের ভরণপোষণ।
তিনি বলেন, “৫০ বছর ধরে এই বাজারে মাছ বিক্রি করি। স্বামী মারা যাওয়ার পর কষ্ট আরও বেড়েছে। ছেলে প্রতিবন্ধী, আবার তারও পরিবার আছে। তাই আমাকে একাই সব সামলাতে হয়। যতদিন বাঁচবো, নিজের হাতে কাজ করেই খাবো।”
প্রতিদিন গড়ে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা আয় হয় তাঁর। তবে এই সামান্য আয়ে সাতজনের সংসার চালানো সহজ নয়। তবুও কারো সাহায্যের দিকে হাত বাড়াননি তিনি।
স্থানীয় ক্রেতা আব্দুল বারী বলেন, “রমনী বালা দাস আমাদের সবার কাছে অনুপ্রেরণা। এত কষ্টের মাঝেও তিনি নিজের ভরসায় সংসার চালাচ্ছেন, এটা সত্যিই বিরল দৃষ্টান্ত।”
তবে এখনো তিনি সরকার থেকে কোনো সহায়তা পাননি। এ বিষয়ে সুবর্ণচর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. নুরুন নবী বলেন, “এমন মানুষরা আমাদের কাছে অনুকরণীয়। আমরা খোঁজ নিয়ে দ্রুততম সময়ে তাঁর জন্য সরকারি ভাতা বা সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টা করবো।”
জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কর্ম করেই মর্যাদার সঙ্গে বাঁচতে চান রমনী বালা দাস। তাঁর সংগ্রামী জীবন দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে সমাজের প্রতিটি মানুষের কাছে।