Logo
×

Follow Us

সারাদেশ

মাছের ঘেরের মাচায় ঝুলছে অসময়ের তরমুজ

Icon

খুলনা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২২:৫৯

মাছের ঘেরের মাচায় ঝুলছে অসময়ের তরমুজ

গ্রীষ্মের ফল তরমুজ এখন শুধু গরমকালেই সীমাবদ্ধ নয়। খুলনার উপকূলীয় কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর, বাগালী ও আমাদী ইউনিয়নের মৎস্যঘেরের পাড়ে শরৎকালেও সবুজ ও রসালো তরমুজের দেখা মিলছে।

দূর থেকে মাচায় ঝুলে থাকা লাউ বা কুমড়ার মতো মনে হলেও কাছে গেলে বোঝা যায়, এগুলো অসময়ে চাষ করা তরমুজ। অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে আর ভোক্তারা পাচ্ছেন মৌসুমের বাইরে প্রিয় ফলের স্বাদ।

মহেশ্বরীপুর এলাকার কৃষক স্বয়ম্ভু শেখর বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তাঁর দুই বিঘা মাছের ঘেরের পাড় অনাবাদি ফেলে রেখেছিলেন। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের পরামর্শে গত ১৫ জুন প্রথমবারের মতো সেখানে আস্থা জাতের ১ হাজার ৫০০টি তরমুজের বীজ রোপণ করেন। আড়াই মাসের ব্যবধানে সেই গাছগুলো এখন ফলে ভরপুর। একেকটি তরমুজের ওজন ৭ থেকে সাড়ে ৭ কেজি।

স্বয়ম্ভু শেখর বলেন, তরমুজ চাষে তাঁর খরচ হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত ৮৩ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন। প্রতি মণ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৬০০ টাকায়। এখনো মাচায় প্রায় ২০ মণ তরমুজ বিক্রির জন্য আছে।

কয়রা উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা গুরুদাশ মণ্ডল জানান, এবার তিনটি ইউনিয়নের ২২৪ বিঘা মৎস্যঘেরের পাড়ে শতাধিক কৃষক মাচান পদ্ধতিতে অসময়ে তরমুজ চাষ করেছেন। এই পদ্ধতিতে কম পরিশ্রমে ভালো ফলন পাওয়া যায়। রোগবালাই ও পোকার উপদ্রবও কম থাকে। রোপণের মাত্র ৭০ দিন পর থেকেই বাজারজাত করা সম্ভব। এবার ফলন হেক্টরপ্রতি প্রায় ৩৫ মেট্রিক টন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কয়রার বাগালী ইউনিয়নের গুপিয়ারবেড়, বগা, কুশোডাঙা, উলা গ্রাম; মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের সাতালিয়া, কালিকাপুর; আমাদী ইউনিয়নের ভান্ডারপোল ও নাকশা গ্রামের কয়েকটি ঘেরের ওপর বাঁশ ও দড়ি দিয়ে মাচা তৈরি করা হয়েছে। মাচায় তরমুজের লতানো গাছগুলো বেড়ে উঠেছে, আর মাচার নিচে সারি সারি ঝুলছে পরিপক্ব তরমুজ। প্রতিটি তরমুজ নেটের ব্যাগে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে।

ভান্ডারপোল গ্রামের তরমুজচাষি বাবুল সানা বলেন, তাঁদের এলাকায় সাধারণত গ্রীষ্মকালে তরমুজ চাষ হতো। এবারই প্রথম অসময়ে তরমুজ চাষ করা হয়েছে। খবর ছড়িয়ে পড়ায় আশপাশের মানুষ কৌতূহল নিয়ে চাষ দেখতে আসছেন।

বাগালী ইউনিয়নের উলা ও বগা গ্রামের ৩০ বিঘা মৎস্যঘেরের ওপর মাচা তৈরি করে অসময়ে তরমুজ চাষ করেছেন আবদুস সালাম, বিল্লাল হোসেন, আসাদুল ইসলাম, হাফিজুর রহমানসহ কয়েকজন কৃষক। তাঁরা বলেন, তরমুজগুলো দেখতে যেমন সুন্দর, খেতেও সুস্বাদু।

মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের সাতালিয়া গ্রামের কৃষক তৈয়েবুর রহমান বলেন, ‘আগে শুধু মৌসুমে তরমুজ চাষ করতাম। এবার সরকারি সহায়তায় অসময়ের এই তরমুজ চাষ শুরু করেছি। পাইকাররা খেত থেকে কেজিতে ৪০–৫০ টাকায় তরমুজ কিনছেন। খরচ বাদে ভালো লাভ হচ্ছে।’

কয়রা উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাইমুর রহমান বলেন, অসময়ে তরমুজ এখন সবচেয়ে লাভজনক ফসল। কয়রার মাটি ও আবহাওয়া এটি চাষের জন্য উপযোগী। এ মৌসুমে প্রতি মণ তরমুজ ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাছের পাশাপাশি তরমুজ চাষ জমির সর্বোচ্চ ব্যবহারের দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে।

Logo