Logo
×

Follow Us

পর্যটন

সুন্দরবন রক্ষায় তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা, বিপাকে বননির্ভর পরিবারগুলো

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক:

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫, ১৪:২২

সুন্দরবন রক্ষায় তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা, বিপাকে বননির্ভর পরিবারগুলো

জীববৈচিত্র্য রক্ষায় জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে সব ধরনের প্রবেশ ও আহরণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বন বিভাগ। পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য এটি জরুরি পদক্ষেপ হলেও এতে বিপাকে পড়েছেন সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল হাজারো পরিবার।

সাতক্ষীরার নদীপারের বহু জেলে, মৌয়াল ও বাওয়াল পরিবার মাছ, কাঁকড়া, মধু ও গোলপাতা আহরণ করে জীবন চালান। এখন বন বন্ধ থাকায় তারা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন এসব মানুষ।

মুন্সিগঞ্জের মৌয়াল শফিকুল গাজী বলেন, “তিন মাস বন বন্ধ, কিন্তু সংসারের খরচ তো থেমে নেই। ৫৫ কেজি চাল পেয়েছি, কিন্তু তা দিয়ে কতদিন চলবে? সুদে টাকা নিয়ে সংসার চালাতে হচ্ছে।”

জেলে হোসেন গাজী বলেন, “মাছ না ধরলে পেটে ভাত জোটে না। বন বাঁচাতে নিষেধাজ্ঞা ঠিক আছে, কিন্তু আমাদের বাঁচার পথ কী?”

অন্যদিকে, পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত অনেকেই আয় হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ট্যুর অপারেটর জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, “ট্রলারগুলো ঘাটে অলস পড়ে আছে। স্টাফদের খরচ মেটানো যাচ্ছে না, ট্রলার মেরামত করাও সম্ভব হচ্ছে না।”

স্থানীয়দের অভিযোগ, সাধারণ বনজীবীরা ঘরে বসে থাকলেও এই সুযোগে বাড়ছে চোরাকারবারিদের তৎপরতা। অনেকেই গোপনে বনে ঢুকে গাছ কাটা ও হরিণ শিকার চালিয়ে যাচ্ছে।

বন বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী রেঞ্জ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, “স্পেশাল ও স্মার্ট টিমের মাধ্যমে নিয়মিত টহল চলছে। কেউ অভিযোগ করলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, শুধু ৫৫ কেজি চাল দিয়ে তিন মাস চলা সম্ভব নয়। গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম বলেন, “অনেক বনজীবী এখনও ত্রাণ তালিকার বাইরে।”

পরিবেশবাদী গাজী আল ইমরান বলেন, “নিষেধাজ্ঞা জরুরি, তবে বিকল্প আয়ের সুযোগ না থাকলে মানুষ বাধ্য হয়ে নিয়ম ভাঙবে। সুন্দরবন টিকিয়ে রাখতে হলে প্রয়োজন মানবিক ও টেকসই পরিকল্পনা যেখানে বনও বাঁচবে, মানুষও।”


Logo