প্লাবিত রংপুর-নীলফামারী-লালমনিরহাটের নিম্নাঞ্চল।
বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপরে তিস্তার পানি, বন্যা আশঙ্কায় তিস্তাপাড়ের মানুষের নির্ঘুম রাত

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৫৭

বন্যা আশঙ্কায় নির্ঘুম তিস্তাপাড়ের মানুষ : ছবি সংগৃহীত
তিস্তা
নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নদীর পানি
উপচে নিম্নাঞ্চলে ঢুকে পড়ায় ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কায় রাত জেগে কাটাচ্ছেন তিস্তাপাড়ের
মানুষ।
রোববার (৫ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টায় ডালিয়া
ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২.২৫ মিটার, যা বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপরে।
মধ্যরাতে (রাত ১২টায়) তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫২.৫০ মিটারে—অর্থাৎ
বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপরে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আশঙ্কা, রাতের মধ্যেই ডালিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহ
বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপরে উঠতে পারে। ইতোমধ্যে তিস্তা তীরবর্তী এলাকায়
সতর্কতা জারি করে মাইকিং করা হয়েছে এবং স্থানীয়দের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার
আহ্বান জানানো হয়েছে।
এদিকে, হঠাৎ
পানিবৃদ্ধির কারণে রংপুরের গংগাচড়া, কাউনিয়া
ও পীরগাছা উপজেলার নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চলসহ নীলফামারী ও লালমনিরহাটের অনেক এলাকা
প্লাবিত হয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকেই তিস্তার পানি অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকায় এসব
এলাকার মানুষ আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছেন।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সন্ধ্যা থেকেই
মাইকিং ও সতর্কতা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। অনেক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে স্কুল ও
আশ্রয়কেন্দ্রে।
চর ইচলির বাসিন্দা মকবুল হোসেন বলেন,
“সন্ধ্যা
থেকে পানি যে হারে বাড়ছে, তাতে
ঘরে থাকা বিপজ্জনক। তাই রাত ১০টার দিকে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছি।”
চর বাঘ ডোহরার আয়নাল হক বলেন,
“চলতি
বছরের মধ্যে আজকেই সবচেয়ে বেশি পানি বেড়েছে তিস্তায়। চর এলাকার অনেকে
আশ্রয়কেন্দ্রে চলে গেছে। জানি না, এই
পানি কবে নামবে—সারারাত বন্যা আতঙ্কে
কাটবে।”
গংগাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা
মাহমুদু হাসান মৃধা জানান,
“নদী
তীরবর্তী ইউনিয়নগুলোতে মাইকিংয়ের মাধ্যমে সতর্ক করা হচ্ছে। সবাইকে গবাদিপশু ও
প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ নিকটস্থ আশ্রয়কেন্দ্র বা বিদ্যালয়ে অবস্থান নিতে বলা হয়েছে।”
পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের
নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন,
“উজানে
ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সকাল ৬টায় বিপৎসীমার ৪৩
সেন্টিমিটার নিচে থাকলেও সন্ধ্যায় তা ৮৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১৩
সেন্টিমিটার ওপরে চলে যায়। রাতে তা আরও বেড়ে ৩৫ সেন্টিমিটার ওপরে পৌঁছায়।”
তিনি আরও জানান, তিস্তার জিরো পয়েন্টের কাছাকাছি
কালীগঞ্জ এলাকায় ডান তীরের প্রধান বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে, যা দ্রুত মেরামতের কাজ চলছে। পরিস্থিতি
নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যারাজের সব ৪৪টি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে তিস্তা তীরবর্তী এলাকায় “রেড অ্যালার্ট” জারি করে মাইকিং করা হয়েছে। স্থানীয়দের
বলা হয়েছে, পানি আরও বাড়ার
আশঙ্কায় যেন সবাই সতর্ক থাকে এবং নিরাপদ স্থানে অবস্থান নেয়।
রাতে তিস্তার পানি যেভাবে বাড়ছে, তাতে আশঙ্কা করা
হচ্ছে—যেকোনো
সময় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিতে পারে।