Logo
×

Follow Us

বিশেষ প্রতিবেদন

অনাবৃষ্টিতে বিলম্বিত আমন আবাদ

Icon

চপল মাহমুদ

প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:২৩

অনাবৃষ্টিতে বিলম্বিত আমন আবাদ

চলতি মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিলম্ব হচ্ছে রোপা আমন ধানের আবাদ। বৃষ্টিপাতের অভাবে চারা রোপণে দেরি, বীজতলা নষ্ট হওয়া এবং উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কায় দুশ্চিন্তা বাড়ছে কৃষকের। পরিস্থিতি সামাল দিতে তারা অতিরিক্ত সেচ ও শ্রম খরচ করে আমনের চারা রোপণ করছেন। এতে বাড়তি খরচের চাপে রয়েছে কৃষক। অনাবৃষ্টির কারণে চলতি মৌসুমে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে রাজশাহী, নওগাঁ, জয়পুরহাট, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, বগুড়া, খুলনা, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, ময়মনসিংহ, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায়। এ ছাড়া বন্যার কারণে ফেনী জেলায়ও এখনও সেভাবে চারা রোপণ শুরু হয়নি। এই বিলম্ব শুধু উৎপাদন ব্যয়ে বাড়তি চাপই নয়, মৌসুমের শেষদিকে ফলনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে চলতি বছর সময়মতো বৃষ্টি হচ্ছে না। বৃষ্টিনির্ভর কৃষিব্যবস্থায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ছে আমন চাষে। সময়মতো বৃষ্টি না হলে কৃষককে বিকল্প ব্যবস্থায় যেতে হয়, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং ঝুঁকিপূর্ণ।

কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গির আলম খান বলেন, আমন আবাদ অনেকটাই প্রকৃতিনির্ভর। সেচ দিলেও বৃষ্টির কমতিটা থেকেই যায়। জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে সময়মতো বৃষ্টি হচ্ছে না। এতে একদিকে ফলনের ওপর প্রভাব পড়ছে, অন্যদিকে কৃষকের উৎপাদন খরচও বেড়ে যাচ্ছে। তবে এখনও চারা রোপণের জন্য হাতে সময় রয়েছে। সরকারের উচিত বৃষ্টির বিকল্প সেচব্যবস্থাকে আরও সহজলভ্য করা। পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে জলবায়ু সহনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন ও প্রচারের ওপর জোর দেওয়া।

কৃষিসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৃষ্টির ঘাটতি রোপা আমন মৌসুমে কৃষিকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কৃষকের চোখে-মুখে অনিশ্চয়তা, জমিতে ফাটল ও বৃষ্টির প্রতীক্ষা। এমন পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি জলবায়ু সহনশীল কৃষিনীতির বাস্তবায়ন প্রয়োজন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৯ লাখ হেক্টর জমিতে এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১ কোটি ৮১ লাখ মেট্রিক টন। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আমনের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ কোটি ৭৮ লাখ মেট্রিক টন। চলতি বছরের লক্ষ্যমাত্রার ৫৯ লাখ হেক্টর জমির মধ্যে আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত মাত্র ১৫ লাখ হেক্টর জমিতে আমনের চারা রোপণ করা হয়েছে। অনেক জায়গায় জমি এখনও শুকনো। ফলে চারা রোপণ সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে কথা হয় কয়েকটি জেলার কৃষকদের সঙ্গে। তারা জানান, বৃষ্টি না থাকায় সেচ দিয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে। একবারের বদলে দুই-তিনবার সেচ দিতে হচ্ছে। যারা সেচ দিতে পারছেন, শুধু তারাই ধান লাগাতে পারছেন। এ অবস্থায় সেচব্যবস্থা সহজ এবং খরচ কমিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।

নওগাঁর কৃষক আব্দুল জলিল বলেন, আগে আষাঢ়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত ধান রোপণ হয়ে যেত। এখন শ্রাবণের মাঝামাঝি এসেও বৃষ্টির দেখা নেই; জমি ফেটে চৌচির। দিনাজপুরের কৃষক মালেক বলেন, প্রতিবছর চার বিঘা জমিতে আমনের চাষ করেন তিনি। গত কয়েক বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় সময়মতো চারা লাগানো যায়নি। বৃষ্টির অপেক্ষায় থাকলে দেরি হয়ে যায়। অবস্থা বিবেচনায় কয়েকবার সেচ দিয়ে ধান লাগাতে হয়। এতে খরচ বেশি পড়ে যায়। কিন্তু ধান বিক্রি করতে গেলে সে অনুযায়ী দাম পাওয়া যায় না।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইংয়ের অতিরিক্ত পরিচালক (মনিটরিং ও বাস্তবায়ন) ড. মো. জামাল উদ্দীন বলেন, সাধারণত আমাদের খরিপ-২ বা আমন মৌসুম জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয়। অনেক সময় বৃষ্টির কারণে কিছুটা আগপিছ হয়। বন্যা হলে বা কোনো কারণে বন্যার পানি নামতে দেরি হলে সেক্ষেত্রে সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত রোপণ করা যায়। এ সময় নাবি জাতের আমন ধানের জাতগুলো রোপণ করতে হয়। এসব জাতের ফলন একটু কম হলেও অন্য জাতের সঙ্গেই ধান কাটা যায়।

তবে বিলম্বিত চাষের কারণে আমনের লক্ষ্যমাত্রায় তেমন প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ছাইফুল আলম। আমাদের সময়কে তিনি বলেন, এখনও আমন রোপণের সময় শেষ হয়ে যায়নি। আমাদের যেসব লেট ভ্যারাইটিগুলো রয়েছে, সেগুলো রোপণের জন্য নির্দেশনা দেওয়া আছে। এ বিষয়ে মাঠপর্যায়ে আমাদের যেসব কর্মকর্তা রয়েছেন, তারা কৃষকদের সঙ্গে সমন¦য় করছেন। আশা করছি বিলম্বিত চাষের কারণে এ বছর আমনে লক্ষ্যমাত্রায় তেমন প্রভাব পড়বে না। তা ছাড়া আগামী রবি শস্যের বিষয়ে আলাদা জোর দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

Logo