পাটের সম্ভাবনা কখনো শেষ হবে না: কৃষি সচিব
নতুন অর্থবছরে চাষের লক্ষ্যমাত্রা ৭.০৫ লাখ হেক্টর

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৫, ২২:৫৯

পাট নিয়ে অনেক কিছু করার আছে, পাটের সম্ভাবনা কখনো শেষ হবে না—এমন মন্তব্য করে বাংলাদেশে পাটখাতের গবেষণা ও উৎপাদন আরও জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান।
সোমবার রাজধানীতে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) আয়োজিত ‘বার্ষিক অভ্যন্তরীণ গবেষণা পর্যালোচনা কর্মশালা-২০২৫’–এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষি সচিব বলেন, পাট শুধু অর্থকরী ফসল নয়, এটি আমাদের গর্ব, আমাদের পরিচয়ের প্রতীক। পাট নিয়ে আমাদের বদ্ধ চিন্তাভাবনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বাজার, প্রযুক্তি ও বাস্তবতা বিশ্লেষণ করে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে গবেষণায় অগ্রসর হতে হবে।
সচিব বলেন, বাংলাদেশের সীমিত জমিকে কাজে লাগিয়েই পাটের উৎপাদন আরও বাড়ানো সম্ভব। তিনি গবেষকদের উদ্দেশে বলেন, সার্বিকভাবে দেখতে হবে—পাটের উন্নয়ন কীভাবে কৃষকের কাছে যায়, কীভাবে শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে আরও ব্যবহার বাড়ে এবং কীভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের অবস্থান সুদৃঢ় হয়।
কৃষি সচিব এ সময় বিদেশি বাজারে পাটের কাঁচামালের চাহিদা বিশ্লেষণ করে গবেষণায় তার প্রতিফলন ঘটানোর পরামর্শ দেন। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, পৃথিবীর অন্য প্রান্তের দেশ কিউবাও বাংলাদেশ থেকে পাট আমদানি করে দুইটি কারখানা গড়ে তুলেছে। অনেক দেশ পরিবেশগত কারণে পাট উৎপাদনে সক্ষম নয়। সেদিক থেকে পাট বাংলাদেশের জন্য একটি আশীর্বাদ।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠানে বাস্তবমুখী প্রযুক্তির সমন্বিত প্রয়োগের ওপরও গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান একত্রে কাজ করলে পাট নিয়ে আমাদের সক্ষমতা বহুগুণে বাড়বে। প্রযুক্তি যেমন বদলাচ্ছে, তেমনই বদলাতে হবে পাট চাষ, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং ব্যবহারের ধরণও।
কর্মশালায় জানানো হয়, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে দেশে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ লাখ ৫ হাজার হেক্টর জমিতে। এই চাষের জন্য প্রয়োজন হবে ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টন পাটবীজ। দেশে বর্তমানে পাটের উৎপাদন বছরে প্রায় ১৫ লাখ টন। পাটকাঠির উৎপাদন ৩০ লাখ টন এবং চারকোল উৎপাদন ৬ লাখ টন। এই চারকোল রপ্তানিতে সরকার ২০ শতাংশ নগদ প্রণোদনাও দিচ্ছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বিজেআরআই এর মহাপরিচালক ড. নার্গীস আক্তার বলেন, পাট শুধু আমাদের সোনালি আঁশ নয়, এটি আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এক গৌরবময় অধ্যায়। তিনি জানান, বিজেআরআই ইতোমধ্যে ৫৭টি পাটের জাত, ২২৩টি কৃষি প্রযুক্তি এবং ৬৯টি শিল্প ও কারিগরি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আবু জুবাইর হোসেন বাবলু, কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. নাজমুন নাহার করিম, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আব্দুল লতিফসহ কৃষি খাতের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, গবেষক এবং কৃষক প্রতিনিধি।
অনুষ্ঠানের বক্তারা বলেন, পাট ভবিষ্যতের পরিবেশবান্ধব ও টেকসই অর্থনীতির অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। গবেষণা, প্রযুক্তি ও নীতিগত সহায়তায় পাটের এই সম্ভাবনাকে বাস্তবায়ন করাই এখন সময়ের দাবি।