Logo
×

Follow Us

প্রাণিসম্পদ

ব্রাহমা গরুর নিলামে অনিয়ম, মৃত গরু জবাইয়ের অভিযোগ

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ২১:৩৯

ব্রাহমা গরুর নিলামে অনিয়ম, মৃত গরু জবাইয়ের অভিযোগ

ছবি সংগৃহীত

বিতর্কের মধ্যেই শেষ হলো আলোচিত ব্রাহমা জাতের গরুর অধ্যায়। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জব্দ করা পাঁচটি গরু নিলামে বিক্রি জবাইয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। জবাইয়ের সময় একটি গরু মারা গেলেও সেটিকেও কেটে বিক্রি করা হয়েছে। মানা হয়নি নিলামের শর্ত।

এই পাঁচটি গরু ২৪ লাখ ৬৮ হাজার টাকায় কিনেছেন রাজধানীর আলোচিত মাংস ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান। পরে খিলগাঁওয়ে তাঁর দোকানে কেজিপ্রতি ১২০০ টাকায় মাংস বিক্রি করেছেন তিনি। কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এই দামকে অযৌক্তিক ভোক্তা-স্বার্থবিরোধী উল্লেখ করে নজরদারি বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, নিলামের শর্ত অনুযায়ী সাভারের কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন দুগ্ধ খামারে জবাই হওয়ার কথা থাকলেও খলিল জবাই করেছেন নিজের দোকানের সামনের রাস্তায়। উপস্থিত ছিলেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক . এবিএম খালেদুজ্জামানযিনি নিজেই দুদকের ব্রাহমা জালিয়াতি মামলার আসামি। উপস্থিত ছিলেন দুদকের কর্মকর্তারাও। কিন্তু প্রকাশ্যেই শর্তভঙ্গ, এমনকি মৃত গরু জবাইয়ের ঘটনাতেও কেউ আপত্তি জানাননি।

দুদক ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ৫টি ব্রাহমা গরু জব্দ করে আদালতের নির্দেশে নিলামের প্রক্রিয়া শুরু করে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর নিলামের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় এবং ২৪ সেপ্টেম্বর সাভার খামারে হয় নিলাম। কিন্তু পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে অনেকটা নীরবে। গণমাধ্যমকে জানানো হয়নি, চাকা বাংলা ডিজিটাল নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে নিলামের ভিডিও প্রচারিত হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, নিলামে উপস্থিত ছিলেন ১০১২ জন, যাদের বেশির ভাগই খলিলের পরিচিত। খলিল নিজেও ছিলেন সেখানে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খামারের এক কর্মকর্তা বলেন, কর্তৃপক্ষ আগেই খলিলকে গরুগুলো দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। নিলাম কেবল আনুষ্ঠানিকতা। 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, গরুগুলো সাভার থেকে আনার পর তিনটি জবাইয়ের পর চতুর্থটি নিস্তেজ হয়ে পড়ে। ক্রেতাদের মধ্যে কেউ কেউ তখন বলেন, 'মরা গরু জবাই করছে কেন?'

খলিল দাবি করেছেন, গরুটি নিস্তেজ ছিল, কিন্তু মারা যায়নি। আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে। তিনি আরও বলেন, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারাই তাঁকে নিলামে অংশ নিতে ফোন করেছিলেন।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক . মো. আবু সুফিয়ান বলেন, গরুগুলো দুদকের জব্দ করা, আমরা শুধু প্রক্রিয়ায় সহায়তা করেছি।

দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, একটি গরু অসুস্থ হয়ে পড়েছিল, মারা যাওয়ার শঙ্কায় আদালতের অনুমতিতে বিক্রি করা হয়।

কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন খামারের পরিচালক ডা. মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, নিলামে ১৩ জন অংশ নিয়েছেন। সর্বোচ্চ দরদাতাকে গরু দেওয়া হয়েছে, কোনো অনিয়ম হয়নি।

ক্যাবের সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, নিলাম বিক্রির পুরো প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ছিল না। গরুর মাংস কেজি ১২০০ টাকাএটা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। সরকারি সংস্থার এমন তদারকি ঘাটতির কারণে ভোক্তা জনস্বাস্থ্য দুই- ঝুঁকিতে।

মাংস ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বারবার আলোচনায় এসেছেন। কখনো সুলভমূল্যে মাংস বিক্রির প্রচারণায় সরকার তাঁকে ব্যবহার করেছে, কখনো নিম্নমানের মাংস বিক্রি মরা গরু বিক্রির অভিযোগে সমালোচিত হয়েছেন। ২০২৩ সালে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে তাঁর এক অডিও, যেখানে তিনি বলেন, 'আমার কাছে এমন অস্ত্র আছে, যেটা এমপি-মন্ত্রীর কাছেও নেই।' পরে বিতর্কের মুখে ব্যবসা ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন, কিন্তু আবার ফিরে আসেন আগের চেয়ে বেশি দাম নিয়ে। আওয়ামী লীগের আমলে ৬৯৫ টাকা কেজিতে মাংস বিক্রি করলেও এখন বিক্রি করেন ৭৯০ টাকায়।

Logo