Logo
×

Follow Us

কৃষি

১৬ বছর পর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের ভোট হচ্ছে

৩৩ হাজার কৃষিবিদের মধ্যে উদ্দীপনা

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ২৩:৩১

১৬ বছর পর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের ভোট হচ্ছে

কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ -ফাইল ছবি

১৬ বছর ভোটবঞ্চিত থাকা কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) এবার নির্বাচনের পথে ফিরছে। আর্থিক অনিয়ম, রাজনৈতিক দখলদারিত্ব ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের পরে প্রশাসকের উদ্যোগে ৩৩ হাজার সদস্যে এই সংগঠনে ফিরেছে স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলা। গঠন হয়েছে নতুন নির্বাচন কমিশন। ভোটকে কেন্দ্র করে কৃষিবিদদের মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্দীপনা।

২০০৯ সালের পর থেকে কেআইবিতে ভোট হয়নি। তখন থেকে আওয়ামী লীগপন্থী বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদ একচ্ছত্র আধিপত্য স্থাপন করেছিল। তফসিল ঘোষণা করা হলেও কোন্দল, মামলা এবং নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্বে নির্বাচন স্থগিত থাকতো। সর্বশেষ ২০১৬ সালে নির্বাচন আয়োজনের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। তখনও দলীয় সংঘাতে ভোটের সূচনা হয়নি। এরপর প্রশাসক নিয়োগ হলেও আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের বিরোধে নির্বাচন ভেস্তে যায়। গণঅভ্যুত্থানের পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। বিএনপিপন্থী কৃষিবিদদের সংগঠন এগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এ্যাব) কেআইবির নিয়ন্ত্রণ নিলেও দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব সংঘাতে রূপ নেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় গত ২০ জানুয়ারি লে. কর্নেল মো. আব্দুর রব খানকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়।

প্রশাসক দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি শুদ্ধি অভিযান শুরু করেন। এতে বেরিয়ে আসে বছরের পর বছর জমে থাকা আর্থিক অনিয়ম— ভুয়া খরচের চালান, প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ, হিসাববিহীন ব্যয়। অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ও সাধারণ ডায়েরি দাখিল হয়েছে। প্রশাসক জানান, আয়-ব্যয়ের নতুনভাবে নিরীক্ষা চলেছে। দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রশাসক লে. কর্নেল মো. আব্দুর রব খান বলেন, সদস্যদের স্বার্থে কেআইবিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা লক্ষ্য। এ কাজে সংগঠনের অনেকে সহায়তা করছেন। তিনি জানান, ২০১৭ সাল থেকে কেআইবির আয়-ব্যয়ের নিরীক্ষার কাজ চলছে। এতে দীর্ঘদিনের আর্থিক অনিয়ম ধরা পড়েছে। সব হিসাব নতুনভাবে নিরীক্ষা করে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, কেআইবির জমির খাজনা ও হোল্ডিং ট্যাক্স কখনও পরিশোধ করা হয়নি। হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইউনাইটেড হাসপাতালের সঙ্গে সদস্যদের চিকিৎসা ছাড়ের জন্য চুক্তি হয়েছে।

অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে দীর্ঘদিনের বৈষম্য দূর করে এখন সবাই প্রভিডেন্ট ফান্ডের আওতায় আসছেন বলে জানান প্রশাসক। তিনি বলেন, একটি ব্যাংকে কেআইবির বড় অঙ্কের টাকা গচ্ছিত ছিল। এখন টাকা উদ্ধারের কাজ চলছে। এক দিকে সংস্কার চলছে, অন্যদিকে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। যোগ্য ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত নতুন নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ভোট উপহার দেবেন। নির্বাচন সংক্রান্ত সব ক্ষমতা কমিশনের।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর গঠিত নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. লুৎফুর রহমান। অন্য সদস্যরা হলেন— বিএডিসির সাবেক মহাব্যবস্থাপক মাহমুদ হোসাইন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মো. তারিক হাসান, তুলা উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক পরিচালক মো. আব্দুল বাতেন, সেনাবাহিনী সদর দপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (কৃষিবিদ) ড. সাইফুল্লাহ আনসারি, সাবেক সচিব ড. মো. আফজাল হোসেন, মৎস্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক ড. মো. আবুল হাছানাত ও প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শরীফ আহমেদ চৌধুরী।

নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা যাচাই–বাছাই শেষে দ্রুত সময়ের মধ্যে তফসিল ঘোষণা করবে। দীর্ঘদিন ভোটবঞ্চিত কেআইবির সদস্যরা এবার নেতৃত্ব নির্বাচনের সুযোগ পাবেন।

কৃষিবিদরা বলছেন, দীর্ঘদিনের লুটপাট ও রাজনৈতিক প্রভাবের পরে প্রশাসকের উদ্যোগে কেআইবিতে নতুন আশা দেখা দিয়েছে। আমরা চাই, ভোটের মাধ্যমে সংগঠনকে আবার কৃষিবিদদের ঐক্যের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ফিরিয়ে আনা হোক।

কৃষিবিদ মাহবুবুর রহমান বলেন, এই নির্বাচনের মাধ্যমে কৃষিবিদের প্রাণের সংগঠনকে দীর্ঘ দিনের অনিয়ম ও রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত করা যাবে। নতুন নেতৃত্ব স্বচ্ছতা বজায় রেখে কৃষিবিদদের কল্যাণে কাজ করবেন বলে আশা করি।

নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. লুৎফুর রহমান রোববার কেআইবির সদস্যদের উদ্দেশে বার্তায় বলেন, সরকারের অনুমোদনক্রমে সাত সদস্যের কমিশন গঠন হয়েছে। কমিশন সংবিধানসম্মতভাবে নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব নিয়েছে। সবার সঙ্গে কথা বলে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ—এই নির্বাচন যেন শান্তিপূর্ণ, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও মর্যাদাপূর্ণ হয়। কৃষিবিদ সমাজকে সবসময়ই শৃঙ্খলা, সৌহার্দ্য ও পেশাগত মর্যাদার প্রতীক উল্লেখ করে তিনি আশা প্রকাশ করেন, সদস্যরা গণতান্ত্রিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নেবেন ও সহযোগিতা করবেন।

Logo