Logo
×

Follow Us

কৃষি

পাকুন্দিয়ায় বাণিজ্যিকভাবে গাছ আলুর আবাদ, কৃষকের নতুন সম্ভাবনা

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৩:১৮

পাকুন্দিয়ায় বাণিজ্যিকভাবে গাছ আলুর আবাদ, কৃষকের নতুন সম্ভাবনা

ছবি সংগৃহীত

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলায় ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে গাছ আলুর বাণিজ্যিক চাষ। স্থানীয়ভাবে পান আলু বা গাছ আলু নামে পরিচিত এ লতানো সবজিটি আগে কেবল ঘরের আঙিনা কিংবা পরিত্যক্ত জমিতেই দেখা যেত। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে এটি বড় পরিসরে আবাদ হচ্ছে।

গাছ আলুর বিশেষত্ব হলোএটি মাটির নিচে নয়, বরং মাচা, ঝোপঝাড় কিংবা গাছে বেয়ে ঝুলে থাকে। মাঠজুড়ে মাচায় ঝুলন্ত সবুজ আলু দেখতে যেন ক্ষুদ্র কোনো বনভূমি।

কৃষকদের ভাষ্য অনুযায়ী, গাছ আলু চাষে খরচ তুলনামূলক অনেক কম। সার বা কীটনাশক প্রয়োজন হয় না বললেই চলে। সাধারণত ধুন্দল বা চিচিঙ্গা ফসল তোলার পর একই মাচায় গাছ আলুর চারা রোপণ করা হয়। তিন থেকে চার মাসের মধ্যেই ফলন পাওয়া যায়।

পাকুন্দিয়ার কৃষক আব্দুল কাদের জানান,
এক বিঘা জমিতে আমার খরচ হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। বিক্রয় থেকে আয় হয়েছে এক লাখ টাকার মতো। খরচ বাদ দিয়েও ভালো লাভ হাতে এসেছে।

স্থানীয় আরেক কৃষক রহিম মিয়া বলেন,
বর্ষার শেষে বাজারে সবজির সরবরাহ কমে যায়। সেই সময় গাছ আলুর ফলন হয়। চাহিদা থাকায় দামও ভালো পাওয়া যায়। এখন কেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি করছি।
বর্তমানে সাধারণ আলু যেখানে কেজি ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, সেখানে গাছ আলুর দাম প্রায় দেড়গুণ। কৃষকদের হিসাবে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচে এক মৌসুমেই লাখ টাকার বেশি লাভ হচ্ছে। এ কারণেই প্রতিদিন নতুন কৃষক গাছ আলুর আবাদে আগ্রহী হচ্ছেন।

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এটি শুধু নতুন একটি সবজি নয়; বরং বর্ষা-উত্তর মৌসুমে কৃষকদের জন্য লাভজনক বিকল্প। জমি ফাঁকা না রেখে কৃষকরা ভালো আয়ের সুযোগ পাচ্ছেন।

চরফরাদী ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা এমদাদুল হক বলেন,
অল্প খরচে বেশি ফলন ও বাজারে ভালো দামএই দুই কারণে গাছ আলু কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠছে। আমরা নিয়মিত তাদের সঠিক সময়ে চারা রোপণ ও মাচার যত্নের পরামর্শ দিচ্ছি। ভবিষ্যতে রপ্তানির সুযোগ তৈরি হলে এ ফসল কৃষকের জীবনমান আরও উন্নত করবে।

পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার নূর-ই-আলম জানান,
গাছ আলু পুষ্টিকর ও সুস্বাদু একটি সবজি। বর্ষার পর যখন অন্যান্য ফসলের ফলন কম হয়, তখন এটি ভালো ফলন দেয়। দীর্ঘদিন সংরক্ষণযোগ্য হওয়ায় বিদেশেও রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলায় এর আবাদ ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।

চলতি মৌসুমে পাকুন্দিয়ায় প্রায় ৩ হাজার বিঘা জমিতে গাছ আলুর আবাদ হয়েছে, উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫০০ মেট্রিক টন। কৃষি বিভাগ আশা করছে, এ সবজি শুধু স্থানীয় কৃষকের জীবনমান উন্নত করবে না, বরং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেরও বড় সুযোগ তৈরি করবে।

পাকুন্দিয়ার কৃষকদের মতে, গাছ আলু এখন তাদের জন্য নতুন আশার প্রতীক। কম খরচে বেশি আয় তাদের ঘরে এনেছে হাসি, আর স্থানীয় অর্থনীতিতে যোগ করছে নতুন গতি।

Logo